হাসি

মন ভাবনায়
তোমার হাসির সুবাস।
সুবাস লভিতে
ভাঙলো উপবাস।
আসন্ন পুর্নিমায়
চাঁদের সাথে তুলনায়,
আমার করা প্রশংসাতে
ভুলো নাকো।
তবে, চোখেতে তুমি
কাজল ভালোই আঁকো।
প্রেমে নাই পড়ো,
ভালো না বাসো,
প্রতি সন্ধ্যায় তবু তুমি
প্রাণ খুলে হেসো।
যদিওবা তুমি হাসো,
আমার কল্পনাতেই,
....... প্রায়শ।

চিঠি দিবসের কবিতা

আজ নাকি চিঠি পাঠাবার দিন।
কিন্তু কী লিখবো?
নাকি অলেখা চিঠিই, তোমায় পাঠাবো?
তোমার মনে যা আসবে,
তাই ভেবে নিও,
আমার বার্তা।
যদি ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে,
ছুড়ে ফেলো।
তবুও, আমার ভালোবাসা সে কাগজের মতো
বিলীন হবে না।
আমি চাই তোমার মৌখিক বিবৃতি।
হয়তো হ্যাঁ নয়তো না।
শুধু আশা থাকবে যে,
তুমি আমায়, ফেরাবে না।

আমার সুখ নিখোঁজ হলে

আমার সুখ নিখোঁজ হলে,
খুঁজবো তব হাসিতে।
যমুনার কালো জলেতে নয়,
ডুবতে চাই,
তোমার কাজল দু আঁখিতে।
দেবে কি, প্রিয়া? দেবে কি?
হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে
কিছু দুঃখ, দেবে কি?
তোমাকে দেখার পর থেকে
যে দুঃখকে ভুলেছি।
তোমার মুখাবয়বে ঝরে,
যখন বাঁকা চাঁদের হাসি,
ইচ্ছে করে তোমায় বলতে, 'কতোটা ভালোবাসি'।

সুকান্তের প্রতি

চেয়ে দেখ কবি।
সুদূর অন্তরীক্ষ থেকে, চেয়ে দেখ আজ।
ক্ষুধা মেটাতে সহস্র তরুণ প্রাণ,
ধরেছে তোমার বিপ্লবী সাজ।
তাঁদের তারুণ্যে তোমার উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
উপেক্ষিত তাঁদের মাতৃস্নেহের দাবি।
শুনেছি তোমার আঠারোর জয়গান।
প্রমাণ রেখেছে তাঁরা,
রেখেছে স্বাধীনতার সম্মান।
কিন্তু অগ্নিস্নানের উত্তাপে যেন
তাঁরা হৃদয়কে না পোড়ায়।
কারণ, হৃদয়হীন হৃদয়
প্রেমের অধিকার হারায়।
তবু, সুকান্ত ফিরুক বিপ্লবে কলমে,
প্রতিহত হোক প্রতিবিপ্লব।
নিশ্চিত হোক
জাতি - ধর্ম নির্বিশেষে সকলের গৌরব।

ডাকাত

আরে! কী ব্যাপার! হৃদয় প্রহরী? ডাকাত পড়েছে, জনাব। ডাকাত সর্দারনী! নিরস্ত্র? না, জনাব। তবে? রূপে, স্নিগ্ধতায় লা-জবাব। (হৃদয়ে ডাকাতনীর প্রবেশ) সর্দারনী, কী চাও তুমি? কাঙাল আমি আর আমার হৃদয় যেন ধূসর মরুভূমি। কেবল ভালোবাসা আছে, শেষ সম্বল আমারি। এও কী হে রমনী? তুমি নেবে তবে কাড়ি?

তুমি

আমার একজন 'তুমি' আছো।
আগেই তোমায় জানাতাম, 'তোমার কথা'।
কিন্তু বড্ড ভয় পাই,
বিশ্বজগতের অসীমতার মধ্যে আমরা যদি কখনো হারিয়ে যাই?
এমন ভেবেই যেন মনের অজান্তে কখনো কখনো,
বিষাদে ঘরছাড়া হয়ে পড়ি।
তবুও তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে,
দিশা যেন না হারাই।
তুমি কি জানো, যে তুমি কতোটা মনোমুগ্ধকর?
তুমি কি জানো? যে তোমায় দেখতে দেখতে
মনে হয় যেন, বিশ্বের সকল সৃষ্টি সুন্দর, তবে তুমি অত্যধিক সুন্দর।
তুমি কি জানো? যে আমার কবিতার প্রতিটি সত্য শব্দ
তোমার নির্ভেজাল হাসির কঠোরতা উপেক্ষা করে
তোমাকে 'তুমি' না ভাবতে পেরে, অর্থদ্যোতকতা হারায়।
শব্দগুলো যেমন আছে তেমনই থাকতে চায়।
ঠিক যেমনটা এখন, তোমার অজান্তে, শুধু তোমার জন্য।

একাত্তর

আমার মনে আজ একাত্তর।
রক্তে ভেজা প্রতিশোধের অমোঘ আগুন!
সেই একাত্তরে, ফিরে দেখি,
যখন আমার উষ্ণ রক্তে তৃষ্ণা মিটিয়েছিলো এ দেশের মাটি।
যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষের পরিবার আমার জন্য কেঁদেছিল, সন্তান হারানোর বেদনায়।
আমি আবারো এসেছি সে অশ্রুর ক্ষতিপূরণের দাবিতে।
আবারো এসেছি একুশ শতকে,
কৃষকের দাবি নিয়ে, শ্রমিকের দাবি নিয়ে।
আমি এসেছি তাদের জন্য যারা এখনো বঞ্চিত।
যারা এখনো স্বাধীনতার অমৃত স্বাদ খুঁজে পায় নি।
তাই, এ যুদ্ধ আমার তাদের বিরুদ্ধে
যারা স্বাধীনতার স্বাদকে তিক্ত করে।
যারা বিপ্লবীদের ঘৃণা করে।
এ যুদ্ধ তাঁদের বিরুদ্ধে,
যাদের চক্ষুশূল একাত্তর।
তাই আবারো আসুক ফিরে, আমারই মতো আমার সহযোদ্ধাদের মনে,
সেই উনিশশো একাত্তর।

মা

আমি একজন মায়ের কথা বলছি।
যিনি পরিবারের একমাত্র বিনা বেতনের পরিচারিকা।
আমি আমার সে মায়ের কথা বলছি।
যাঁর ঘাড়ে দায়িত্বের বোঝা, মনে একরাশ মমতা।
তিনি অনন্যা দশভূজা, ছদ্মবেশে তিনি মাতা।
আমি আমার বোনের কথা বলছি,
যাঁর অন্তরে লালিত স্নেহময়ী আরেক মাতা,
ইতিহাসে আর বইয়ের পাতায়, মায়ের মহত্ব গাঁথা।
মায়ের ভাষার গৌরব বুকে ত্যাজিল যাঁরা প্রাণ,
বাংলার পথে ভেসে ওঠে আজো, তাঁদের সে তাজা রক্তের ঘ্রাণ।
আমি গর্বিত যে, আমি দায়িত্বশীল এক জননীর সন্তান।
তাঁর স্নেহাশীষে ভরে ওঠে যে আমার মনপ্রাণ।
একজন মা, দশজন মা, পৃথিবীর যত মা
শ্রেষ্ঠ তাঁরা, দখলে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের উপমা।

ক্ষুধার্ত স্বপ্ন

আমার স্বপ্নের চেয়ে হয়তো
ঐ তিনবেলা না খাওয়া বস্তির ছেলের
আকাশছোঁয়া স্বপ্ন কম দামি নয়।
আমার চেয়ে হয়তো
ঐ তমসা ঘনা রাত্তিরে বৃষ্টিবিলাশ করা কিশোর
কম অক্সিজেনের দাবি রাখে না।
কিন্তু কত অল্পতেই তারা খুশি।
অল্পই যেন তাদের কাছে বেশি।
আমি যখন দেশকে নিজের প্রেয়সীরূপে কল্পি,
তারা হয়তো তখন দেশের ধুলো চুমে ব্যর্থ প্রেমের গ্লানি ভোলে।
আমি যখন সুকান্তের কবিতা পড়ে,
তাদের অধিকার এবং দাবি নিয়ে ভাবি।
তখন তারা তাদের ক্ষুধার দাপটে হয়তো সে কবিতা চিবিয়ে খায়।
হয়তো মানচিত্র চিবিয়ে খেতে দেরি নেই আর।
সুযোগ পেলে তারা বড় বড় অট্টালিকা খাবে।
বিঘা শতেক তো কথাই নয়।
আরো খাবে সে, সচেতন শকুনে যা খায়।

এদেশে

এদেশে প্রতি ভোরে হুতুম পেঁচা ডাকে,
মানুষের কাঁধে জেঁকে বসে শকুন।
মানুষ তীব্র ক্ষুধায়, মানুষের স্বপ্ন খায়।
তবু ক্ষুধা মেটে না।
তবু ক্ষুধা মেটে না।
রক্তাক্ত এ অবেলায়, চোখে আগুন ধরে যায়।
সে আগুন নেভে না।
সে আগুন নেভে না।
এদেশে আঁধার যেন কমে না, কমে না।
তবু জ্ঞানের আলোতে
দিশা খোঁজে, বিক্ষুব্ধ যাযাবর।

সুচয়না

প্রিয় সুচয়না,
আমার কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই।
হয়তো অজান্তেই,
নিষ্পাপ দৃষ্টিতে, আটক করেছিলে নির্মম মায়ায়।
নিশ্চিত যে এ মায়ায় বিন্দুমাত্র কপটতা নেই।
এ মায়া কি তবে ভালোবাসা?
আমি যে কখনো কখনো,
তোমায় আমার লেখা কবিতার
প্রতিটা পাতায় পাতায় খুঁজে পাই।
এ মায়ার কারায়,
প্রতিরাতে লিখে যাই 'প্রেমবন্দীর জবানবন্দী'।
প্রিয়,
আমি বন্দী থাকতে চাই।
আমাকে অনুগ্রহ করে,
যাবজ্জীবন কারাদন্ড দাও।

বিশ্বজয়ের অহংকার

চিঠি লেখার ধৈর্য নেই,
মুখে বলবার সাহস নেই।
তবে কিভাবে জানাব তোমায়?
যে, তুমিই আমার বৈরাগ্যের কারণ।
হৃদয়জুড়ে আঁধার। তবু,
তোমার জোছনামাখা হাসির আবছা আলোয়,
তোমাকে পাবার ইচ্ছেগুলো দিশা হারায় না।
কখনো মনে হয়,
তোমার দুচোখের মায়ায় পড়ে
আমি বিশ্বজয় করে ফেলব।
তোমার মনে জায়গা কেনার চেয়ে
বড় বিশ্বজয় আর কী-ই বা হতে পারে!
তোমাকে পাবার অহংকারেই যেন
আমার পতন হয়।

আমি ততটা উচ্চবিত্ত নই

আমি ততটা উচ্চবিত্ত নই।
তবে, ভালোবাসতে কখনো কার্পণ্য করি না।
আমি ততটা শিক্ষিত নই।
যতটা শিক্ষিত হলে, গুছিয়ে প্রেম নিবেদন করা যায়।
আমি ততটা উচ্চবিত্ত নই।
তবে, ভালোবাসতে কখনো কার্পণ্য করি না।
আমি ততটা শিক্ষিত নই।
যতটা শিক্ষিত হলে, গুছিয়ে প্রেম নিবেদন করা যায়।
আমি ততটা খারাপ নই।
যতটা খারাপ হলে, কারোর হৃদয়ে দখলদারিত্ব করা যায়।
আমি ততটা মিথ্যেবাদী নই।
যতটা মিথ্যেবাদী হলে, তোমার অতিরঞ্জিত প্রশংসা করা যায়।
আমি ততটা সাহসী নই।
যতটা সাহসী হলে, সহসা বলে ফেলব তোমায় ভালোবাসি।
আমি ততটা সুন্দর নই।
যতটা সুন্দর হলে, সুন্দরের অবহেলা সইতে হয় না।
তবে, আমি ঠিক ততটাই দুর্বল।
যতটা দুর্বল হলে, তোমার সৌন্দর্য্য এড়ানো যায় না।